মাহফুজ মন্ডল, বগুড়া:
উৎসবের রঙে, শ্লোগানের উত্তাপে, হাততালির গর্জনে মুখর ছিল বগুড়া জিলা পরিষদে আয়োজিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম বগুড়া ইউনিটের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ২০২৫। বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, বগুড়া ইউনিটের ২০২৫ সালের সম্মেলন যেন হয়ে উঠেছিল এক উৎসব আর প্রত্যয়ের মেলবন্ধন। এই সম্মেলন শুধু নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়, ছিল দীর্ঘ ত্যাগ, সংগ্রাম আর আদর্শের বিজয়ের দিন। সম্মেলনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, বগুড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র এবং সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। অতিথিদের কণ্ঠে কেবল শুভেচ্ছা নয়, শোনা গেছে অতীতের দুঃসময় পেরিয়ে আগামীর স্বপ্নের কথাও।
৩৫৯ জন ভোটারের মধ্যে ৩২৮ জনের অংশগ্রহণেই প্রমাণ হয়েছে, এই নির্বাচন শুধু প্রক্রিয়ার নয়, এটি ছিল সমর্থনের, আস্থার, এবং প্রতিরোধের ঘোষণাপত্র।
ভোটের ফলাফল জানিয়ে অ্যাডভোকেট মাহবুবর রহমান যখন মাইকে ঘোষণা দিলেন নতুন নেতৃত্বের নাম, তখন বার ভবনের বাতাস যেন কিছুটা ভারী হয়ে উঠেছিল আবেগে।
পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল বাছেদ হয়েছেন সভাপতি, অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন মন্ডল সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক হয়েছেন এবিএম সাইফুল ইসলাম শিমুল, সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম শফিক। সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন অ্যাডভোকেট একেএম ফজলুল হক, যদিও এ পদে অ্যাড. আরাফাত জান্নাত নীলা সমান ভোট পেয়ে সিনিয়রকে সম্মান জানিয়ে তাঁকে ছাড় দিয়ে শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়িয়েছেন।
এই ফলাফল শুধুমাত্র ভোটের অঙ্ক নয়। এটি দুই ত্যাগী নেতার রক্ত, ঘাম আর অশ্রুর ফসল। অ্যাডভোকেট আব্দুল বাছেদ যিনি বর্তমানে পাবলিক প্রসিকিউটর পিপি হিসেবে সরকার তাকে সম্মানিত করেছেন। আওয়ামী দুঃশাসনের সময় তিনি ছিলেন রাজপথের লড়াকু সৈনিক। মিথ্যা মামলা, হামলা, হয়রানি পেরিয়েও কেউ থামাতে পারেনি তাকে। অনেক সময় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। তবু মুখে হাসি, চোখে দৃঢ়তা।
আর অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন মন্ডল যিনি শুধু আইনজীবী নন, ছিলেন আওয়ামী শাসনামলের চোখের বিষ। একের পর এক হামলার শিকার হয়েছেন তিনি। বিশেষ করে তার কলোনী এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আক্রমণের শিকার হয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা। আর্থিক ক্ষতি, মানসিক যন্ত্রণা পেরিয়েও তিনি হাল ছাড়েননি। এক সময় তার ঘনিষ্ঠদের মুখেও শোনা যেত “মতিন ভাই না থাকলে হয়তো আমরা আজ বেঁচে থাকতাম না মামলা মোকদ্দমার জ্বালায়।”
বিগত আওয়ামী শাসনামলে এই দুই নেতা ছিলেন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অগ্রভাগে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ঘোষিত হলেই যারা ছিলেন চক্ষুশূল। এ কারণেই তাদের বিজয় শুধু পদের নয়, এটি এক ত্যাগের স্বীকৃতি। তাদের আরেকটি অনন্য পরিচয় মানবিকতা। বহু গরিব, অভাবী বিএনপি কর্মীর পাশে দাঁড়িয়েছেন বিনা পারিশ্রমিকে। আইনি সহায়তা দিয়েছেন, দিয়েছেন আর্থিক সাহায্য। কেউ কেউ জানান, মামলা পরিচালনার খরচ তো দূরে থাক, বাড়ি ফিরে যাওয়ার রিকশাভাড়াটুকু পর্যন্ত হাতে তুলে দিয়েছেন এই দুই নেতা। কেন্দ্রীয় নেতারা যেমন বললেন, বগুড়ার এই নির্বাচন দেশের অন্যান্য ইউনিটের জন্য “নির্বাচনের মডেল”। সেই মডেলের মূল ভিত্তি আদর্শ, একতা আর নেতৃত্বের প্রতি মানুষের আস্থা। নতুন নেতৃত্বের কাছে তাই প্রত্যাশা এই ফোরাম হবে আরও সুদৃঢ়, আরও শক্তিশালী, আরও জনসম্পৃক্ত। আজকের নির্বাচিত নেতৃত্ব প্রমাণ করেছে, ত্যাগ বৃথা যায় না। ঝড় আসে, আঘাত আসে, কিন্তু যারা সত্যিকার অর্থে জনগণের, যারা আদর্শের, তাদের জয় একদিন হবেই।
বগুড়ায় বিএনপি আইনজীবী ফোরামের এই নির্বাচনের গল্প তাই শুধুই ভোটের গল্প নয়। এটি এক অনন্য লড়াইয়ের ইতিহাস, যেখানে বাছেদ-মতিনের মতো মানুষরা হয়ে উঠেছেন নির্যাতনের মধ্যেও দীপ্তির বাতিঘর। তাদের বিজয় এই বার্তা দেয় “অন্যায় যতই প্রবল হোক, ন্যায় একদিন বিজয়ী হবেই।”