মাহফুজ মন্ডল, বগুড়াঃ
বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ের শাহ সুলতান বলখী (রহ.)-এর মাজারে প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী ও জিয়ারতকারী আগমন করেন। কিন্তু এই পবিত্র স্থানটিতে পৌঁছাতে গিয়ে যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। কারণ, মহাস্থান ডাকবাংলো রোডসহ আশপাশের সড়কগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ভেঙে পড়েছে। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানি ও উজানের ঢলে মহাস্থান এলাকার প্রধান সড়কগুলোয় জমে থাকা পানি ও দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত ও খানা-খন্দ। বিশেষ করে শালবাগান থেকে ডাকবাংলো রোড পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা চরম বেহাল হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বগুড়া সদর উপজেলার চিংগাসপুর, সরলপুর ও মথুরা এলাকার কালিদহ সাগরসহ একাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক উঁচু ঢিবি সারারাত ধরে কেটে শত শত ট্রাকে মাটি পাচার করা হচ্ছে এই রাস্তাগুলো দিয়েই। অতিরিক্ত লোড বহন করায় অতি অল্প সময়েই সড়ক ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
এ ঘটনায় জড়িত রয়েছেন এলাকার একাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। অভিযোগ রয়েছে বগুড়া সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি), সদর ও শিবগঞ্জ থানা, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় টাউট-বাটপাড়দের একটি সিন্ডিকেট এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।
তারা প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকার উঁচু ঢিবিগুলো কেটে মাটির সমান করে ফেলছে যা দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ওপর এক চরম আঘাত।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পরিবহন চালকেরা বলছেন, প্রতি শুক্রবারসহ ছুটির দিনগুলোতে মহাস্থানে ভিড় জমে হাজারো মানুষের। সিএনজি, অটো, বাস, মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য যানবাহন এসব বিধ্বস্ত রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়শই নষ্ট হচ্ছে, ঘটছে দুর্ঘটনা। এক ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “মহাস্থানগড়ের কারণে বগুড়া দেশ-বিদেশে পরিচিত। অথচ এর আশপাশের সড়কের যা অবস্থা তা কল্পনার বাইরে। শুধু মানুষ নয়, ইতিহাসও যেন আজ পিষ্ট হচ্ছে এই দুর্নীতির নিচে।” দূর-দূরান্ত থেকে আগত জিয়ারতকারীদের অনেকেই জানান, রাস্তায় এতটাই ভাঙাচোরা যে গাড়িতে বসে আসা মানেই পিঠে আঘাত পাওয়া। হেঁটেও আসা কষ্টকর। ধর্মীয় আবেগ নিয়ে যারা শান্তি খুঁজতে আসেন, তারা আতঙ্ক ও ক্লান্তি নিয়েই ফিরে যান।
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান বলেন, “উপজেলা প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন প্রামাণিক এর মাধ্যমে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী, অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো খবর আসবে। সচেতন এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের দাবি শুধু রাস্তার সংস্কার নয়, অবিলম্বে প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা থেকে মাটি কাটা বন্ধ এবং এ বিষয়ে একটি স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
তাদের ভাষায়, “রাস্তা ভাঙা বড় সমস্যা, কিন্তু তার চেয়েও বড় দুঃখ এই অঞ্চলের ইতিহাস যেভাবে কেটে বিক্রি করা হচ্ছে, তা জাতীয় দুর্ভাগ্যের বিষয়। বগুড়ার মহাস্থানগড় শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয় এটি উত্তরবঙ্গের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয়ের অংশ। অথচ এই অঞ্চলের সড়ক ব্যবস্থার এমন করুণ চিত্র, মাটির পাচার ও দুর্নীতির অভিযোগ আমাদের লজ্জিত করে। দ্রুত সংস্কার, দোষীদের শাস্তি ও প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ না নিলে আমরা হারাতে পারি এক অমূল্য ঐতিহাসিক ঐতিহ্য।