অনলাইন ডেস্ক:
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ‘নুরাল পাগলার’ লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
শনিবার (০৬ সেপ্টেম্বর) দলের যুগ্মমহাসচিব ও দলীয় মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান এ নিয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে মাজারকে কেন্দ্র করে যা হয়েছে তা পুরোটাই অজ্ঞতাজনিত বর্বরতা। এর সঙ্গে ইসলাম, ইসলামী রাজনীতি ও ইসলামী চিন্তার কোনো সম্পর্ক নাই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এই বর্বরতার সাথে সম্পৃক্ত মূল পরিকল্পনাকারী ও দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার সম্পৃক্ত করা হয়েছে। জনমনে যে বিষয়টি নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে তা স্থানীয় প্রশাসন জানতো। কিন্তু তারা কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয় নাই। তাদের উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। তাই স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা তদন্ত করে দেখতে হবে।
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ইসলাম দাওয়াহ নির্ভর একটি ধর্ম। বিশেষ করে আমাদের এই অঞ্চলে ইসলাম বিস্তৃত হয়েছে প্রেম-ভালোবাসা, জ্ঞান ও সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে। ভিন্নমতের সঙ্গে সহ-অবস্থান করেই ইসলাম এই অঞ্চলে বিস্তৃত হয়েছে। ভিন্নমতের সঙ্গে যুক্তি-তর্ক ও বোঝাপড়ার মধ্যদিয়েই এখানে ইসলাম জায়গা করে নিয়েছে। ফলে এই ধরনের আচরণ কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না।
তিনি আরও বলেন, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরের লাশের প্রতিও সম্মান দেখিয়েছেন। সেখানে মুসলমান বলে দাবিদার কারও লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেয়ার মধ্যে যে বর্বরতা তা ইসলামের চিন্তা কাঠামোতে কল্পনাও করা যায় না। যারা ইসলামের মতো একটি মহান ধর্মের নাম করে এটা করেছেন তারা মেজাজে শরিয়াহ ও মাকাসিদে শরীয়াহ সম্পর্কে জানেন না। তারা ইসলামের দাওয়াতি নীতিমালা জানেন না। তারা শত্রুর সঙ্গে ইসলামের আচার-রীতি সম্পর্কেও জানেন না। আবার যারা ইসলামের নাম করে মাজার বানিয়ে সেখানে ইসলাম অসমর্থিত কর্মকাণ্ড করেন তারাও ইসলামের মূল বার্তা সম্পর্কে জানেন না। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ দুটি উচ্ছৃঙ্খল দলের বাড়াবাড়ি ও উগ্র ঘটনাকে এতদূর পর্যন্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের সামগ্রিক ইসলাম চর্চার চরিত্র, ধরন ও প্রকৃতির সঙ্গে এর ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নাই।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু ধর্মপ্রাণ মানুষের দেশ তাই এখানে ধর্মীয় বিষয়াবলিতে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করার জন্য গ্রহণযোগ্য কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার। এই সমস্যাটা যদি সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যবস্থাপনার মধ্যে সমাধান করা যেতো তাহলে পরিস্থিতি এতদূর গড়ায় না। তাই প্রথমত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং ধর্মীয় বিষয়াবলিতে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করার জন্য গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ওই দিনই সন্ধ্যায় এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তার ভক্ত-অনুরাগীদের অংশগ্রহণে দরবার শরিফের ভেতরে দ্বিতীয় জানাজা শেষে রাত ১০টার দিকে তাকে মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু স্থানে বিশেষ কায়দায় দাফন করা হয়। পবিত্র কাবা শরিফের আদলে তার কবরের রঙ করা হয়। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৌহিদি জনতা। তাদের আন্দোলনের ফলে কবরের রঙ পরিবর্তন করা হয়।