তারিক আল মুরশিদ গাজীপুর থেকে :
গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানায় দায়ের করা এক হামলার মামলায় এমন একজন ব্যক্তির নাম আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন—বিদেশে অবস্থানরত একজন ব্যক্তি কীভাবে দেশে সংঘটিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন?
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর বৌ বাজার গাজীবাড়ি মোড় এলাকায় অবস্থিত মাদ্রাসাতুর রহমাহ আল-আরাবিয়া মাদ্রাসায় গত ১৪ অক্টোবর রাতে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল চলাকালে একদল দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। এতে কয়েকজন বলনডিয়া ও উপস্থিত দর্শনার্থী আহত হন।
পরে আহতদের উদ্ধার করে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মাওলানা লুৎফুর রহমান টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, “বিবাদী সাফওয়ানসহ ১০-১২ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি মাহফিলে হামলা চালিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।”
তবে অভিযোগে যার নাম এসেছে, সেই সাফওয়ান আহমেদ ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে সৌদি আরবে কর্মরত রয়েছেন এবং এর পর থেকে দেশে ফেরেননি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি সৌদি আরবের একটি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত চাকরি করছেন। ফলে এই ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
সৌদি আরব থেকে যোগাযোগ করা হলে সাফওয়ান আহমেদ বলেন,
আমি ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে সৌদি আরবে কর্মরত আছি। দেশে কী ঘটেছে তা সামাজিক মাধ্যমে জেনেছি। আমি চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং আমার বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ দেওয়া হলো তারও বিচার হোক।”
আমি কখনও কোনো সংঘর্ষ বা বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। যারা ভিত্তিহীনভাবে আমার নাম অভিযোগে যুক্ত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই৷
অভিযোগকারী মাওলানা লুৎফুর রহমান বলেন,
আমাদের মাহফিল চলাকালে কিছু লোক এসে হামলা চালায়। এতে কয়েকজন বলনডিয়া আহত হন। আমরা ভয়ভীতিতে ছিলাম, তাই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য থানায় অভিযোগ করেছি।”
টঙ্গী পূর্ব থানার এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান,
অভিযোগটি তদন্তাধীন রয়েছে। যাদের নাম এসেছে, তাদের অবস্থান ও ঘটনার সময়কার উপস্থিতি যাচাই করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
যদি কোনো ব্যক্তি বিদেশে অবস্থান করেন এবং সেই সময় দেশে সংঘটিত ঘটনার সঙ্গে তার নাম আসে, তাহলে তদন্তে তার অবস্থান ও প্রমাণ যাচাই করেই আইনি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যথাযথ প্রমাণ না থাকলে তার নাম বাদ দেওয়ার বিধান রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাফওয়ান একজন বিএনপি কর্মী হিসেবে পরিচিত। ফলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই হয়তো তার নাম মামলায় যুক্ত করা হয়েছে বলে অনেকের ধারণা।
তবে এ বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মন্তব্য করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ বলছেন, “বিদেশে থাকা ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করা প্রশ্নবিদ্ধ”, আবার কেউ মনে করছেন, “তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন হবে।
বর্তমানে সৌদি আরবে থাকা সাফওয়ান আহমেদ ও তার পরিবারের নির্দোষ দাবী করে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা করছেন।