স্টাফ রিপোর্টার:
ঢাকায় ভূমিকম্পে নিহত স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম রাফি (২২) বগুড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। শনিবার বিকেলে বগুড়া শহরের নামাজগড় কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
এর আগে বাদ যোহর বগুড়া শহরের সূত্রাপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় রাফির বাবা ওসমান গনি, আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী, শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধবসহ শহরের হাজারো মানুষ অংশ নেন।
ঢাকায় প্রথম জানাজা শেষে বেলা ১১টার পর রাফির লাশ বগুড়ার বাড়িতে আনা হলে এলাকাবাসীর মাঝে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। হাজারো মানুষ ভিড় করেন প্রিয় মুখটির শেষ দেখা পাওয়ার জন্য।
রাফি বগুড়া ওয়াইএমসিএ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (SSC 21 Batch) এবং বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ (HSC 23 Batch) অতিক্রম করে বর্তমানে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ৫২ ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তো।
বগুড়া শহরের খান্দার এলাকার মিশন হাসপাতালের পাশে রমিছা ভিলা ছিল রাফির ঠিকানা। দুই ভাইবোনের মধ্যে রাফি ছিলেন ছোট। বড় বোন রাইসা ২০১৬ সালে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে বর্তমানে অনার্স শেষ বর্ষে পড়ছেন।
রাফির বাবা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ।
ভূমিকম্পের সময় রাফির সঙ্গে থাকা তার মা-ও আহত হন। তাকে ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে বগুড়ায় এনে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জানাজা শেষে ফ্রিজার ভ্যানে করে রাফির মরদেহ হাসপাতালের সামনে আনা হলে মর্মান্তিক একটি দৃশ্য ঘটে।
জ্ঞান ফেরার পর রাফির মা নুসরাত জাহান নিপাকে ট্রলিতে করে নিচে নামানো হয়। সেখানে তাকে জানানো হয়—তিনি যে একমাত্র ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বের হয়েছিলেন, সেই রাফিই আর বেঁচে নেই। সংবাদটি শুনে মায়ের বুকফাটা আহাজারিতে পরিবেশ মুহূর্তেই ভারী হয়ে ওঠে।
পরে তার মাকে আবার হাসপাতালে বেডে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকরা জানান, ইটের টুকরা লাগার কারণে রাফির মায়ের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।সেখানে একটি অপারেশনের প্রয়োজন ।
পরিবার জানায়, শনিবার দুপুর পর্যন্তও মাকে ছেলের মৃত্যুর বিষয়টি বলা হয়নি, তার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছিল।
গত শুক্রবার মায়ের সঙ্গে মাংস কিনতে বের হয়েছিলেন রাফি। ঠিক সেই সময় ভূমিকম্পে দেয়াল ধসে তাঁর মৃত্যু হয়।
রাফির মৃত্যুতে পরিবার, সহপাঠী, শিক্ষক, বন্ধু ও পরিচিতজনদের মাঝে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া।
মহান আল্লাহর কাছে দোয়া—
আল্লাহ রাফিউল ইসলাম রাফিকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন; তার মাকে দ্রুত সুস্থতা এবং শোকাহত পরিবারকে এই অপূরণীয় ক্ষতি সহ্য করার শক্তি দান করুন।