
স্টাফ রিপোর্টার:
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে প্রধান দুই বিরোধী দলের প্রার্থীর মধ্যে এক তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস মিলছে। একদিকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য শামীম কায়ছার লিংকন এবং অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী ডা. আব্দুর রহিম সরকার। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের আলোচনায় এবার বিএনপি প্রার্থীর তুলনায় ডা. আব্দুর রহিম সরকারের এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা প্রবল হচ্ছে।
বিএনপির প্রার্থী শামীম কায়ছার লিংকন, যিনি একসময় উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন, এবার দলের ভেতরেই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে জোটের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ১২ হাজার ভোট পাওয়াসহ নানা কারণে তার ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ।
অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘ আওয়ামী লীগ শাসনামলে তাকে গোবিন্দগঞ্জের রাজনীতিতে খুব একটা সক্রিয় দেখা যায়নি এবং দলের ত্যাগী নেতাদের দাবি, কঠিন সময়ে তাকে কখনো কারাবরণ করতে হয়নি। এর ফলে, গোবিন্দগঞ্জের যে সকল ত্যাগী নেতা-কর্মী জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, তারা এবং তাদের সমর্থকরা বর্তমান প্রার্থীর মনোনয়নে বেশ ক্ষুব্ধ।
সম্প্রতি ৫ আগস্টের পর শামীম কায়ছার লিংকনকে মিডিয়ায় ধর্মীয় বক্তব্য বা জামায়াতবিরোধী মন্তব্য করে ‘ভাইরাল’ হতে দেখা গেলেও, ৫ আগস্টের আগের আন্দোলন-সংগ্রামে তাকে রাজপথে দেখা যায়নি— এমন অভিযোগই তুলছেন তৃণমূলের ক্ষুব্ধ নেতা ও সমর্থকরা।
জনসেবার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা
অন্যদিকে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত হলেও ডা. আব্দুর রহিম সরকার কখনও জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে যাননি। স্থানীয়রা বলছেন, ফ্যাসিবাদী সময়েও তিনি রাজপথে সক্রিয় ছিলেন এবং গোবিন্দগঞ্জের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
তাঁর জনমুখী কার্যক্রমগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:
সামাজিক সহায়তা: অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা, অসুস্থ পরিবারের পাশে থাকা এবং বন্যার সময় ত্রাণ তৎপরতা চালানো।
গোবিন্দগঞ্জের বিভিন্ন রাস্তা সংস্কারসহ নানা সামাজিক কাজ চালিয়ে গেছেন।
দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নির্বাচনের মাঠ গুছিয়ে নিয়েছেন এবং প্রতিটি ইউনিয়নে কর্মীদের নিয়ে সেক্টরভিত্তিক কাজ ভাগ করে দিয়েছেন। জনসেবা ও সাংগঠনিক তৎপরতার কারণে ধারণা করা হচ্ছে, গোবিন্দগঞ্জে এবার জামায়াতের এই প্রার্থী বিশাল চমক দেখাতে পারেন।
বর্তমানে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা চলছে যে, বিএনপির ত্যাগী নেতারা মূল্যায়ন না পাওয়ায় তাদের অনেক সমর্থকও এবার প্রতীক বা প্রার্থীর বদলে জনসম্পৃক্ত নেতা ডা. আব্দুর রহিম সরকারকে ভোট দিতে পারেন।
সবমিলিয়ে বলা যায়, গোবিন্দগঞ্জের এই আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীন কোন্দল ও নিষ্ক্রিয়তার বিপরীতে জামায়াত প্রার্থীর দীর্ঘদিনের জনসেবা ও সাংগঠনিক শক্তি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে। এই আসনে বিএনপিকে সম্ভবত কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে — এমন সম্ভাবনাই বর্তমানে সবচেয়ে প্রবল হয়ে উঠেছে।